আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আবারো চলে এলাম পাঠকদের কাছে নতুন একটি টপিক নিয়ে।এবার গল্পে গল্পে শিখবো ম্যাগনেটেক সাসপেনশন।
গাড়িতে কমবেশী সবাই আমরা চড়েছি।বর্তমানে জনবহুল এই দেশে গাড়িতে থাকে উপচে পড়া ভিড়।আর রাস্তার অবস্থা ও কোথাও কোথাও মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ। রোলার কোস্টার এর ফিল পাই নি এমন কেউ নেই আমরা।কখনো চাকা নিয়ে রাস্তার ওই গর্তের মধ্য দিয়ে কিছু চালিয়ে গেলে দেখবেন চাকাটি খুব টুকু ওপরে ওঠে আবার নিচে নেমে যাচ্ছে।নরমাল সেই চাকাটি আমরা হাত বা লাঠি দিয়ে চালাতেই এই অবস্থা হয়।আমরা যদি সেই চাকাটি তীব্র বেগে চালাই তাহলে কেমন হবে একটু ভেবে দেখেছেন!!! গাড়ির ভেতর থেকে আমরা অনেকটাই বুঝি না, নাহলে গাড়ি তো বটেই,মানুষের দেহের ভেতরের গঠনই পরিবর্তন হয়ে যেতো,হা হা!
একটু খেয়াল করলে দেখবেন চাকার দিকে স্প্রিং রিলেটেড একটা যন্ত্র রয়েছে,যার বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি না।ঠিক ওই জিনিসটাই হলো সাসপেনশন।যখন কোন চাকা উঁচু নিঁচু রাস্তায় চলে তখন এই যন্ত্রটাই খাড়াভাবে আসা ক্ষতিকর বলগুলোকে নিচে শোষন করে নেয়।এই জন্য বাসে থাকা আমরা রোলার কোস্টারের ফিলিংস একটু কম পেয়ে থাকি।
চলুন একটু বিস্তারিত জানি। সাধারন সাসপেনশনের এর মুল পার্টসটি হলো শক এভজরভার যার অংশগুলো কি কি আমরা নিচের ছবিটিতেই দেখতে পাচ্ছি।এর মধ্যে ওপরের লিংক(upper link) টি গাড়ির ফ্রেমের সাথে লাগানো থাকে ও নিচের লিংকটি(lower link) সাধারনত গাড়ি বাজে রোডে চললে শক এবজরবারে এই মোমেন্ট ট্রান্সফার করে।শক এবজরবার ভার্টিকাল বলকে কাজে রুপান্তর করে না,বরং তা শোষন করে ফেলে।এজন্য তেমন কোন সমস্যা দেখা যায় না।
তবে এটি অনেক পুরাতন পদ্ধতি এবং এর সাহায্যে সহজেই সাসপেনশন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না,যার জন্য রাস্তায় দুর্ঘটনাও হতে পারে।চারটি চাকাতে এগুলো মুক্ত ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়না,যা পরবর্তীতে আরো সমস্যার সৃষ্টি করে।এখানে একটি মুভিং পার্টস আছে,যেটি হলো স্প্রিং,যা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে ও নির্দিষ্ট সময় পরপর এর পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
এসব সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ম্যাগনেটিক সাসপেনশন সিস্টেমের সৃষ্টি।মুলত ম্যাগনেটিক শক এভজরবারের ওপর ম্যাগনেটিক সাসপেনশন নির্ভর করে।
আমরা আগেই জানি যে কোন কয়েলের ভিতর দিয়ে যখন তড়িৎ প্রবাহিত হয় তখন তার চারদিকে চুম্বক ফাক্সের সৃষ্টি হয়,যেটি অন্য চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষন করতেও সক্ষম। ঠিক এই সহজ তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে ম্যাগনেটিক শক এভজরবারের সৃষ্টি।
ম্যাগনেটিক শক এভজরবারের মধ্যে কোন স্প্রিং থাকে না,যার থাকে ইলেকট্রোম্যাগনেট এবং পিস্টন।এই পিস্টনের মধ্যেও ইলেকট্রোম্যাগনেট এবং এই পিস্টনে ছিদ্র আছে যার মধ্য দিয়ে তেল সহজেই পরিবাহিত হতে পারে।এই তেল নরমাল তেল নয়,এই তেল হলো সংশ্লেষিত তেল যার মধ্যে লোহার পার্টিকেল রয়েছে।
চলুন দেখে আসি ম্যাগনেটিক সাসপেনশন সিস্টেম কিভাবে কাজ করে।
ম্যাগনেটিক সাসপেনশন সিস্টেমে ম্যাগনেটিক শক এভজরবার বাদেও সেন্সর,ইলেকট্রিকাল কন্ট্রোল ইউনিট(ECU),ব্যাটারি রয়েছে।এই সিস্টেমে ম্যাগনেটিক সাসপেনশন সিস্টেম প্রতিটি চাকাতেই লাগানো হয়। যখন গাড়ির বডি উঁচুনিচু পথে চলে তখন এই সেন্সর ECU কে বল যে এই সমস্যা। ECU সেটি বিশ্লেষণ করে।ECU এর সাথে ব্যাটারি লাগানো থাকে,যেটি প্রয়োজন অনুযায়ী তড়িৎ শক এভজরবারের মধ্যে পাঠায়।এরফলে ইলেকট্রোম্যাগনেট ফ্লাক্স তৈরি করে,যা তেলের মধ্যে থাকা লোহার পার্টিকেলকে আর্কষন করে।এজন্য সেটি সুসজ্জিত হয়ে জমা হয় পিস্টনের ছিদ্রগুলোতে।ফলে তেল সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে না।এর জন্য তেলের কাঠিনতা বেড়ে যায়,শক সহ্য করার ক্ষমতা বেড়ে যায়।তাই ঝাঁকি কম লাগে।
এই ম্যাগনেটিক সিস্টেমের অনেক বড় উপকারীতা হলো যে ৪টি চাকাতেই ECU এর মাধ্যমে এটি পৃথকভাবে কন্ট্রোল করা যায়।এছাড়া এটি ছোট থেকে ছোট রোডেও চালানো সক্ষম। তাই যত খারাপ রোডই হোক এটি খুব সহজে চালনো যাবে।এতে স্প্রিং ব্যবহার করা হয়না বলে ঘনঘন পার্টস পরিবর্তনের দরকার হয়না।বর্তমানে আরো দ্রুত রেসপন্স করার জন্য এখানে ডাবল কয়েল ব্যবহার করা হয়,যার জন্য এটি বিপরীতমুখী কারেন্টকে সহজে রোধ করে,যেটি এই সাসপেনশনকে আরো দ্রুতগামী করে। কিন্তু এর অন্যতম সমস্যা হলো এর দাম সাধারন সাসপেনশন থেকে বেশী।তাই এটি বর্তমানে হাই প্রাইস গাড়িগুলোতে শুধু ব্যবহৃত হয়।আগামী দিনগুলোতে ইনশাআল্লাহ প্রযুক্তির উন্নতিতে নতুনত্ব দেখা যাবে বলে আশা করা যায়।
আশা করি আপনাদের সকলেরই এই বেসিক ব্লগটি ভালো লেগেছে।সামনে আরো মজার মজার অটোমোবাইলের টপিক নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।আসসালামু আলাইকুম।