uncategorized

অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমের অ আ ক খ

আবারো চলে এলাম আপনাদের কাছে,আরো একটি সুন্দর এবং মজার শিক্ষনীয় একটা টপিক নিয়ে। কখনো কি ভেবে দেখেছেন,যখন একটি গাড়ির স্টিয়ারিং এ ঘুরালেই কিভাবে গাড়ি ডানে,বামে,সামনে,পিছনে,কখনো ধীরে,কখনো দ্রুত গতিতে কেন ছুটে যায়? শুধু তাই না,আবার দেখা যায় পাশে একটি হাতলের মতো যন্ত্রকে গাড়ির ড্রাইভার কখনো সামনে,কখনো পিছনে নিচ্ছে।আবার ডান বাম পা দিয়ে ব্রেক প্যাডেল,অ্যাকসিলেরেটর প্যাডেল,ক্লাচ প্যাডেল চাপেন ড্রাইভার। আবার এখন তো কোন কোন গাড়িতে দেখা যাচ্ছে মানুষকে অলস বানানোর জন্য বাম পা কে যাতে ব্যবহার না করতে হয়,সেজন্য ক্লাচ প্যাডেলও সরিয়ে দিচ্ছে। এগুলো আসলে কি,আমাদের প্রত্যকের সবার একবার হলেও এটি জানার আগ্রহ তো অবশ্যই জন্মেছে।ঠিক এমনই এক সিস্টেম হলো অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেম

জিনিসটা এতোক্ষণে তোমাদের কাছে অনেক আর্কষনজনক লেগেছে নিশ্চয়ই। চলো একটু সহজ ভাষায় এর বেসিকটা জেনে আসি।অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেম এর ব্যাপারে জানার আগে চলুন একটু সহজ ভাষায় জেনে নেই ট্রান্সমিশন সিস্টেম এবং গিয়ারবক্স জিনিসটা কি!

গিয়ার বক্সে ভিন্ন ভিন্ন গিয়ার থাকে।যখন গাড়ি প্রথম গিয়ারে থাকে,তখন গাড়ির স্পিড কম থাকে তবে টর্ক বেশী থাকে।গিয়ার যত বাড়ে ঠিক তার বিপরীতটাই হয়।

এখন কথা হলো ট্রান্সমিশন সিস্টেম কি? ট্রান্সমিশন সিস্টেম কারের গিয়ারবক্সের সাথে সংযুক্ত থেকে ইঞ্জিনের রোটেশনাল পাওয়ারকে ড্রাইভিং হুইল পর্যন্ত নিয়ে যায়,যার জন্য কার মুভ করে।

হুম বেসিক তো হলো!

চলুন আমরা এখন জেনে আসি অটোমেটিক এবং ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন সিস্টেম এর মধ্যে পার্থক্য টা কি?

১/অটোমেটিক ট্রান্সমিশনে যেখানে ৪টি মোড(পার্কিং(P),ড্রাইভিং(D),রিভার্স(R),Neutral(N)) এর সাহায্যে খুব সহজেই চালক গাড়ি চালাতে পারেন,সেখানে ম্যানুয়ালে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে গাড়ি কোন গিয়ারে চালাতে হবে।মজার কথা হলো,অটোমেটিক ট্রান্সমিশন গাড়িতে আপনি ম্যানুয়ালিও গাড়ির গিয়ার পরিবর্তন করে চালাতে পারবেন,সেখানে সেই সুযোগটিও থাকছে আপনার জন্য।

২/ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন সিস্টেমে নিজের মতো করে খুব সহজেই গাড়ি কন্ট্রোল করা সম্ভব।

৩/ধরুন আপনার সামনে কোন বাধা আছে যেটি আপনাকে দূর্ঘটনার কবলে ফেলতে পারে,অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেম আপনাকে রক্ষা করবে,সেই পরিস্থিতি থেকে।

৪/অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমে ক্লাচ প্যাডেল নাই ঠিকই তবে এর ভিতরে এমন অনেক পার্টস রয়েছে যার ম্যাইনটেনেন্স খরচ আপনার পুরনো ম্যানুয়াল কার থেকে অনেক গুন বেশী।

৫/অনেক সময় দেখা যায় আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন।হুট করে আপনার গাড়ি থেমে গিয়েছে।যদি দেখেন আপনার ফুয়েল অথবা টায়ারের কিছু হয় নাই,তাহলে আপনার কপালে চিন্তার ভাঁজ পরাটা স্বাভাবিক। অটোমোবাইলের ভাষায় একে stalling বলে।অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমে এ সমস্যাটা একদমই নেই,তবে ম্যানুয়ালে বেশী।

৬/অটোমেটিক সিস্টেমে খুব সহজেই আপনি হিলি অথবা উঁচু এমন জায়গায় খুব সহজেই জেতে পারবেন,না ম্যানুয়ালে একদমই কষ্টকর।

তো চিন্তায় পড়ে গেলেন নাকি? ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন সিস্টেম নিবেন নাকি অটোমেটিক ট্রান্সমিশান সিস্টেম সম্পন্ন গাড়ি। আরে ভাই চিন্তার কিচ্ছুটা নেই। আমি আপনাকে খুব ছোট কিছু পরামর্শ দিচ্ছি,যার কথা চিন্তা করে আপনি খুব সহজেই আপনার পছন্দের গাড়িটি কিনতে পারবেনঃ

১/দিন দিন আমাদের সব গাড়ির মেকানিজম ইলেকট্রনিকস বেছ হয়ে যাচ্ছে,মুভিং পার্টস গুলোও কমে যাচ্ছে, তো এই ক্ষেত্রে অটোমেটিক ট্রান্সমিশন অবশ্যই ম্যানুয়াল থেকে এগিয়ে থাকবে।

২/অটোমেটিকে ড্রাইভিং নিয়ে চিন্তার কিছুই নেই।আপনি যদি ম্যানুয়ালে গাড়ি চালিয়ে অভ্যস্ত থাকেন,তাহলে আপনার জন্য একদম সহজ হবে অটোমেটিক ট্রান্সমিশনে সুইচ করা।

৩/ যখন ইলেকট্রিক কার একসময় বিশ্ব দখল করবে।তখন অটোমেটিক ট্রান্সমিশনের আলাদা একটা জগৎ ই তৈরি হবে অটোমোবাইলের দুনিয়ায়।

৪/ম্যানুয়ালে ক্লাচ ও অ্যাকসিলেরটর প্যাডেলের যে সমন্বয় করতে হয়,অটোমেটিকে কিন্তু সেই জিনিসটা নেই।কারন তো জানেন ই,একদম প্রথমেই বলে দিয়েছি,তাই না!

এখন কোন গাড়ি নিবেন সেটা আপনার ডিসিশন।

আপনাদের মনে অবশ্যই একটা জিনিস পার্থক্য পড়ার সময় মাথায় এসেছে।সেটি হলো অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেমে মোড টি কোথা থেকে এলো,এগুলোর ঠিক বৈশিষ্ট্যই বা কি?অটোমেটিক ট্রান্সমিশনের গাড়ি চালাবোই বা কি করে? আরে আরে এত্তো চিন্তার কিচ্ছু নেই।

তাহলে চলুন সংক্ষিপ্ত ভাষায় এসব মুডের ব্যাপারের ছলে সহজে কিভাবে অটোমেটিক ট্রান্সমিশনের গাড়ি চালাবেন সেটিও জেনে আসি:

আপনি গাড়ি চালানোর সময় প্রথমে পার্কিং ( P ) মোডে গিয়ার রেখে গাড়ি অন করবেন।ঠিক সেসময় অবশ্যই আপনার পা ব্রেকে রাখবেন।তারপর যদি পিছনে যেতে চান তাহলে রিভার্স ( R ) মোডে গিয়ারকে নিয়ে,আস্তে করে ব্রেক প্যাডেল থেকে ডান পা কে সরিয়ে নিবেন,দেখবেন গাড়ি অটোমেটিকলি পিছনের দিকে যেতে থাকবে। সামনে,ডানে,বামে নেয়ার জন্য আপনি পুনরায় ব্রেক প্যাডেলে ডান পা দিয়ে চাপ দিয়ে গাড়িটির গিয়ার ড্রাইভিং (D) মোডে নিয়ে যাবেন।সেসময় আস্তে আস্তে ব্রেক প্যাডেল থেকে পা কে সরিয়ে নিবেন,আর গতি বাড়াতে হলে অ্যাকসিলেরেটর প্যাডেলে চাপ দিবেন।আপনাদের আমি প্রথমেই বলেছিলাম যে অটোমেটিক কারে ম্যানুয়াল সিস্টেম দেখা যায়।এই ম্যানুয়াল সিস্টেমটি দেখা যায় ড্রাইভিং(D) মোডে।আপনি ড্রাইভিং(D)মোডে নিয়ে হালকা ডানে মোচড় দিলে (+) ও (-) চিহ্ন দেখতে পাবেন। এটি মুলত ম্যানুয়ালি গিয়ার চ্যান্জিং সিস্টেম।আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী সেটি পরিবর্তন করতে পারবেন। অসাবধানবশত ধরুন আপনার গিয়ার নিউট্রালে(N) চলে গেল ড্রাইভিং(D) গিয়ার থেকে।কি ভাবছেন গাড়ি থেমে যাবে,মোটেও না।গাড়ি চলতে থাকবে আপন গতিতে।তবে ড্রাইভিং গিয়ার থেকে সরাসরি রিভার্স গিয়ারে ডিরেক্ট কখনোই যাবে না।কারন গিয়ারের হাতলে একটি ট্রিগার থাকে,যেটাকে প্রেস না করে কখনোই এটি করা সম্ভব নয়।কত্তো সহজ না চালানো!

তো কেমন লাগলো অটোমোবাইলের ব্লগটি? আশা করি আপনাদের একটু হলেও জ্ঞানের সাগরে ডুব দেওয়াতে পেরেছি। এখন আর অটোমেটিক ট্রান্সমিশনের গাড়ি নিয়ে আপনাদের মনে কোন প্রশ্ন থাকবে না। খুব শীর্ঘই আবার আসবো অটোমোবাইলের আরো একটি গল্প নিয়ে। খেলায় খেলায় শিখবো নতুন কিছু।ততোদিন পর্যন্ত ভালো থাকবেন,আর হ্যা বাহিরে গেলে মাস্ক পড়তে ভুলবেন না। ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম।

ইব্রাহিম খলিল অপূর্ব
লেখক সম্পর্কে
ইব্রাহিম খলিল অপূর্ব

ইব্রাহিম খলিল অপূর্ব চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের স্নাতক বর্ষের ছাত্র। তিনি গাড়ির প্রতি খুব আগ্রহী এবং হিট ট্রান্সফার, ফ্লুইড মেকানিক্স, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, অটোমোবাইলের এনালিটিকাল ও ম্যানুফ্যাকচারিং ঘরানার কাজে আগ্রহী। এছাড়া তিনি মেকানিকাল ডিজাইনের উপর একজন সার্টিফায়েড সলিডওয়ার্ক্স এসোসিয়েট। তার সিমুলেশন, পাইথন প্রোগ্রামিং এ দক্ষতা রয়েছে। এছাড়া, তিনি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসেন। আমরা আশাবাদী যে ইব্রাহীম খলিল অপূর্বর অবদান বাংলা অটোমোবাইল স্কুল কে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।