মোটরসাইকেল এমন এক সহজ যানবাহন যা কম মূল্যে সহজতর মবিলিরি সলিউশন দিয়েছে অনেক মধ্যবিত্তদের। এটি যেমন সহজ করে দিয়েছে কোটি মানুষের ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থাকে, ঠিক তেমনই অন্যদিকে মোটরসাইকেল সার্ভিসিং এর বাড়তি খরচ ও ঝামেলাও বাড়িয়ে দিয়েছে। আরো সঠিকভাবে যদি বলতে যাই তাহলে বলা চলে ভুল বা অদক্ষ সার্ভিসিং এর ঝুট ঝামেলা।
মোটরসাইকেল মেরামত কাজে সবচেয়ে বেশী যে অংশ নিয়ে রাইডাররা ঝামেলা পোহান তা হলো ইঞ্জিন ওভারহোলিং। ইঞ্জিন ওভারহোলিং মানেই লম্বা সময় ধরে বাইকটি সার্ভিস সেন্টারে পড়ে থাকা, পার্টস কেনার ঝামেলা সেই সাথে এক গাদা সার্ভিস চার্জ। তাই ইঞ্জিনের কাজের কথা শুনলেই বাইকারদের ভ্রু কুঁচকে যায়। তবে অনেক বাইকরারই ইঞ্জিন ওভারহোলিং এর বড় একটা কারণ সম্পর্কে অবগত নন। সাধারণত ইঞ্জিন যদি ৫০ হাজার কিলোমিটার অধিক রান করা হয় তাহলে ইঞ্জিন সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে কার্বন জমে যায়। বিশেষ করে পিস্টনের হেড এ কার্বনের আস্তরণ পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ইঞ্জিনের কম্প্রেশন প্রেসার বেড়ে যায়, ইঞ্জিন ওভারহিট হয়। তাই ইঞ্জিন হেড এবং সিলিন্ডার ডিসমেন্টলিং করে ডিকার্বোরাইজিং বা কার্বন সিলিন্ডার এর অভ্যন্তর হতে পরিষ্কার করা হয়। তবে যদি কম্প্রেশন প্রেসার দূর্বল হয় তাহলে কয়েকটা উপসর্গ লক্ষণীয়।
প্রথমত ইঞ্জিন পাওয়ার অনেক কমে যায়, অর্থাৎ থ্রটল রেসপন্স অনেক লো হয়। মনে হয় বাইক চলতে কষ্ট হচ্ছে। তারপর সাইল্যান্সের এর দিকে কালো, সাদা ধোয়া বের হতে থাকে। এর কয়েকটি কারনে অন্যতম একটি হলো পিস্টন রিং ক্ষয় হয়ে যাওয়া। যার দরুণ ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা বাতাস এবং জ্বালানীর মিশ্রণ পিস্টন এর গা বেয়ে ইঞ্জিন ক্রাংককেসে চলে যায় ( একে ব্লো বাই বলা হয়) এবং যেহেতু বাতাস ও জ্বালানীর মিশ্রনের অনেকটাই পিস্টনের গা বেয়ে ক্রাংককেসে চলে যায় তাই ইঞ্জিন পাওয়ার যথেষ্ট উৎপন্ন করতে পারে না।
অন্যদিকে পিস্টন রিং ক্ষয় হওয়ার কারনে ইঞ্জিন অয়েল পিস্টনের গা বেয়ে কম্বাসন চেম্বারে চলে যায় এবং সাইলেন্সার দিয়ে সাদা ধোয়া বের হয়। এ কারনে ইঞ্জিনে ইঞ্জিন অয়েল এর পরিমাণ দ্রুত কমতে থাকে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য পুরো ইঞ্জিন পিস্টন এবং রিং পরিবর্তন করতে হয় সেই সাথে সিলিন্ডারও রিপেয়ার করতে হয়। যা মোটামুটি সময়সাধ্য ও খরচের ব্যাপার। একটা যন্ত্র চলতে চলতে তো ক্ষয় হবেই তবে যদি সঠিক মেইন্ট্যানেন্স নলেজ না থাকে তাহলে সময়ের আগেই সমস্যা দেখা দিবে। পিস্টনের রিং ক্ষয় হয়ে যাওয়ার পেছনে দুটো খুবই সিম্পল কারন বেশীরভাগ সময় দায়ী।
১. পেপার এয়ার ফিল্টার ঘন ঘন কম্প্রেসড এয়ার দ্বারা পরিষ্কার ২. ইঞ্জিন অয়েল দেরি করে পরিবর্তন এবং ভুল গ্রেড এর অয়েল ব্যবহার।
প্রথমে আমরা এয়ার ফিল্টার প্রসঙ্গে আসি। সাধারণত যেসব মোটরসাইকেল এ পেপার এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করা হয় তা অনেক সময় রাইডাররা ঘন ঘন কম্প্রেসসরের বাতাস এর উচ্চ চাপে পরিষ্কার করিয়ে থাকেন। উচ্চ চাপের বাতাস এবং ঘন ঘন পরিষ্কার করার দরুণ এয়ার ফিল্টার এর ছিদ্র বড় হতে থাকে।
এক সময় বাইরের ধূলাবালি সরাসরি ইঞ্জিনে প্রবেশ করে সিলিন্ডারে চলে যায়। এই বালি কণা সমূহ পিস্টন এবং সিলিন্ডারের ওয়ালে ক্ষুদ্র স্ক্র্যাচ বা আচঁড় দাগ কেটে দেয়। যার কারনে ইঞ্জিন অয়েল পিস্টনের উপরে উঠে যেতে পারে এবং সময়ক্রমে ইঞ্জিন এর আয়ুষ্কাল কমতে থাকে। তাই পেপার এয়ার ফিল্টার সার্ভিস লাইফে সর্বোচ্চ দুবার পরিষ্কার করা যাবে তারপর পরিবর্তন অবশ্যই। অনেক রাইডাররা ৩০০ - ৪০০ টাকার এয়ার ফিল্টার এর টাকা বাঁচাতে গিয়ে ঘন ঘন এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করে থাকেন।
পরবর্তীতে ইঞ্জিন ওভারহোলিং বাবাদ ৩ হতে ৫ হাজার বা তারও বেশী খরচ গুণতে হয়। সাধারণত এয়ার ফিল্টারের আয়ুষ্কাল রাইডিং এরিয়া ভেদে ৫ হতে ৮ হাজার কি.মি পর্যন্ত বাংলাদেশের রাস্তায় ব্যবহার করা শ্রেয়। এবার আসি ইঞ্জিন অয়েল এর প্রসঙ্গ নিয়ে। ইঞ্জিন অয়েল যে কটি মূখ্য কাজ রয়েছে ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইঞ্জিনের পার্টসসমূহের মাঝে লুব্রিকেশন বা পিচ্ছিলতা বজায় রাখা। সব ইঞ্জিনে একই ধরণের অয়েল ব্যবহার করা যায় না। এটি নির্ভর করবে ঐ ইঞ্জিনের জন্য নির্ধারিত অয়েলটি কত মোটা বা পাতলা হবে তার উপর।
ইঞ্জিন যত চলতে থাকে ততই ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে তাপ এবং চাপ এর দরুণ অয়েল এর এই গাঢ়ত্ব বা ভিসকোসিটি (যদিও ভিসকোসিটির বাংলা অর্থ গাঢ়ত্ব নয়, এটি রুপক অর্থে ব্যবহৃত) কমতে থাকে।
ইঞ্জিন অয়েল এর গ্রেডকে এর ভিসকোসিটি ইনডেক্স নাম্বার বলা হয়। যেমন কোনো অয়েল এর গ্রেড ধরে নেয়া যাক 20 W 40 তাহলে এই গ্রেডটি ঐ অয়েল এর ভিসকোসিটি ইনডেক্স।
সঠিক সময়ে যদি ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা না হয় তাহলে ভিসকোসিটি কমে যাওয়ার কারনে ইঞ্জিনের পার্টস সমূহের মাঝে লুব্রিকেশন বা পিচ্ছিলতা ধর্ম কমে গিয়ে ঘর্ষণ এবং অতিরীক্ত হিট উৎপন্ন হতে থাকে। এতে করে তাড়াতাড়ি ইঞ্জিনের পার্টস সমূহ ক্ষয় হতে থাকে। যেহেতু পিস্টন খুবই দ্রুত উঠানামা করে ইঞ্জিন সিলিন্ডারে, তাই ভিসকোসিটি কমে গেলে পিস্টন রিং খুব দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায় এবং এ কারনেই কম্প্রেশন কমে যাওয়া, ইঞ্জিন অয়েল কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। সুতরাং নিয়মিত এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন এবং ইঞ্জিন অয়েল রিলেটেড মেইন্ট্যানেন্স করলে ইঞ্জিনের স্থায়ীত্ব, পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ হতেও পরিত্রাণ সম্ভব।