uncategorized

সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে ভেহিকেল টু পেডেস্ট্রিয়ান বা V2P কমিউনিকেশন

ভূমিকা

বর্তমানে মোটরগাড়িতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভেহিকেল টু এভরিথিং কমিউনিকেশন বা V2X, এবং ভেহিকেল টু এভরিথিং কমিউনিকেশনের একটি অংশ হলো ভেহিকেল টু পেডেস্ট্রিয়ান কমিউনিকেশন বা V2P যা উদ্ভাবিত হয়েছে পথচারীর সেফটি বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু এই প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?

রাস্তায় সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে থাকে পথচারী, সাইকেল ও মোটর সাইকেল আরোহীরা । অটোমোবাইল প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ভেহিকেল টু এভরিথিং কমিউনিকেশন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয় যার উদ্দেশ্য গাড়িকে নিরাপদ রাখা ও দূর্ঘটনার হাত থেকে বাচানো। কিন্তু V2X এর উদ্ভাবনের পর দেখা গেলো, পথচারী বা সাইকেলআরোহীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একটি প্রযুক্তির উদ্ভাবন বা বিকাশের প্রয়োজন, সেই চিন্তা থেকেই ভেহিকেল টু পেডেস্ট্রিয়ান বা V2P এর উদ্ভাবন হয়।

V2P কমিউনিকেশন কি?

V2P মূলত ভেহিকেল টু এভরিথিং বা V2X এর একটি উপশ্রেণী। এটি পথচারী বা আরোহী, যাদেরকে vulnerable road user বলা হয়, তাদের সনাক্ত ও তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, যে প্রযুক্তি কথা না বলতে পারলে কিভাবে যোগযোগ করে? সাধারনত, ভেহিকেল টু ভেহিকেল কমিউনিকেশনে এক গাড়ি অন্য গাড়িকে শনাক্ত করে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে "যোগাযোগ" স্থাপন করে। অন্যদিকে V2P তে ভিন্ন ধরনের interaction এর প্রয়োজন হয়, যার মাধ্যমে গাড়ি পথচারীকে শনাক্ত করে।

V2P এর প্রকারভেদ

সাধারনত দুই প্রকার V2P protocol এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হলো -

১। গাড়ির মধ্যে ব্যবহৃত প্রযুক্তি যেমন Forward Collision Warning System এবং Blind-Spot Warning System গাড়ি এবং পথচারী বা পশুপাখিকে শনাক্ত করতে পারে।

২। হাতে ধরে ব্যবহার করা যায় এমন প্রযুক্তি বা ডিভাইস, যেমন স্মার্টফোন ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় পথচারী চিহ্নিত বা শনাক্ত করতে এবং এই শনাক্তের ফলে গাড়ির চালককে গাড়ি দূর্ঘটনা এড়াতে সহযোগিতা করে।

V2P প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা

প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কেন V2P প্রযুক্তি নিয়ে গবেষনা চলছে? বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ২০১৯ সালে কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৬৬০০ পথচারী আহত, নিহত বা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে ও গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে। যদি V2P প্রযুক্তির আরও উন্নতি হয়, তাহলে পথচারীর দুর্ঘটনায় কবলে পড়ার হার অনেকাংশে কমবে বলে আশা করা যায়।

V2P এর উদাহরন

আমার লেখা পূর্বের ব্লগগুলোতে ADAS নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি। ADAS system এ ব্যবহৃত Sensor দ্বারা পথচারীকে শনাক্ত করে গাড়িকে ও চালককে সতর্ক করে দিবে। বর্তমানে বৃহত পরিসরে V2P এর ব্যবহার শুরু হয়নি, এখনো এই প্রযুক্তির উন্নয়ন কাজ চলছে।

হোন্ডা উদ্ভাবিত V2P system

জাপানী গাড়ি নির্মান প্রতিষ্ঠান হোন্ডার রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট বিভাগ Dedicated Short Range Communications (DSRC) technology ব্যবহার করে পথচারী শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, এজন্য ব্যবহার করতে হবে স্মার্টফোন যেটিতে অবশ্যই DSRC প্রযুক্তি থাকতে হবে। হোন্ডার V2P সিস্টেমে নির্দিষ্ট রেঞ্জের ভেতর থাকা গাড়ি এবং DSRC সহ স্মার্টফোনে যোগাযোগ স্থাপন করে। হোন্ডার এই সিস্টেমে ভিজুয়াল ওয়ার্নিং ও সাউন্ড ওয়ার্নিং দিয়ে গাড়ির চালক এবং পথচারীকে সতর্ক করে দেয়। V2P সিস্টেমে ব্যবহৃত DSRC প্রযুক্তি পথচারির হাটার গতি ও পথ বা দিক পর্যালোচনা করে এবং গাড়িকে জানিয়ে দেয় পথচারীর হাতে স্মার্টফোন আছে কিনা এবং সে ট্রাফিক বা যানবাহনসমূহ খেয়াল করছে কিনা, তবে সেজন্য পথচারীকে অবশ্যই DSRC প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে।

নিউ ইয়র্কে ব্যবহৃত V2P App

Savari নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিউ ইয়র্কের Connected Vehicle Project এর জন্য একটি বিশেষ V2P সিস্টেমসম্পন্ন এপ তৈরী করেছে। SmartCross নামের এই এপ প্রোজেক্টটির উদ্দেশ্য হলো প্রতিবন্ধী পথচারীকে নিরাপদে চৌরাস্তা পার হতে সহযোগিতা করা।

Savari এর এই প্রযুক্তি শহরের রাস্তার ধারের রোড সাইড ইউনিটের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। প্রশ্ন হলো রোড সাইড ইউনিট কি? রোড সাইড ইউনিট এক ধরনের wireless communication device যা গাড়ি ও গাড়ি সংক্রান্ত বিভিন্ন ডিভাইস বা প্রযুক্তির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। প্রতিবন্ধী পথচারীরা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রাফিক সিগনালের নটিফিকেশন পায় তাদের স্মার্টফোনে। এছাড়া, রাস্তায় চলমান গাড়িগুলোও Savari উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও রোড সাইড ইউনিটের মাধ্যমে কিছু বিশেষ সংকেত পেতে পারে যা পথচারী ও গাড়ির সাথে সংঘর্ষের আভাস দিতে পারে।

V2P এর সুবিধা-অসুবিধা

V2P সিস্টেম ব্যবহারের ফলে যানযট, অতিরিক্ত যানবাহন হ্রাস পাচ্ছে, এছাড়া, সড়ক দূর্ঘটনা হ্রাসেও অবদান রাখছে এই প্রযুক্তি। তবে এত সুবিধার পাশাপাশি কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে এই প্রযুক্তির। যেমন এই প্রযুক্তি তূলনামূলক ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। এছাড়া, V2P সিস্টেম সম্পন্ন গাড়ি অনুমান করে নেয় যে সকল পথচারীর স্মার্টফোনই DSRC প্রযুক্তি সম্পন্ন এবং সিস্টেম তখন সেভাবে কাজ করে, যা অনেক সময়ে V2P সিস্টেম ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যহত করে। এই সমস্যা সমাধানে স্মার্টফোন নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং প্রতিটি স্মার্টফোনে DSRC প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার

V2P সিস্টেম এখন আধুনিক এবং নতুন গাড়িগুলোর ADAS সিস্টেমের সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং সামনে এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে এবং আশা করা যায় ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ও সিস্টেম ব্যবহারে গাড়ির, যাত্রীর ও পথচারীর নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পাবে

মেহরাব মাসাঈদ হাবিব
লেখক সম্পর্কে
মেহরাব মাসাঈদ হাবিব

মেহরাব মাসাঈদ হাবিব বাংলা অটোমোবাইল স্কুল এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। পড়াশোনা করেছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি - বাংলাদেশ (এআইউবি) এ। তার লেখা বই "অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং আদি অন্ত" রকমারির প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে দীর্ঘদিন এক নাম্বার বেস্টসেলার এর স্থান ধরে রেখেছে।